ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নতুন এক বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। এই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বকে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে (বাংলাদেশ সময়) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলা ভাষায় প্রায় আধাঘণ্টার ভাষণে ছাত্র-জনতার সাহসিকতা, নতুন বাংলাদেশ গড়তে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ভূমিকা, ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন যুদ্ধ, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণসমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
এই নোবেলজয়ী বলেন, ছাত্র–জনতা অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছেন। তাদের এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত, যা এ দেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে বিশ্বাস করি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।
এ সময় তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিতাড়িত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচন করে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা গভীর বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে দেখতে পেলাম, কীভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিকব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, কীভাবে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, কীভাবে জনগণের অর্থসম্পদ নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়েছিল, কীভাবে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সব ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এককথায়, প্রতিটি পর্যায়ে নীতি ও নৈতিকতার অবক্ষয় ছিল সীমাহীন।
ড. ইউনূস বলেন, এ রকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।
খবরটি শেয়ার করুন